আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম আজ আমি আপনাদের মাঝে যে বিষয় নিয়ে কথা বলবো তা হল আনারস
খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। আমরা সকলেই জানি আনারসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম। যা মানব দেহের জন্য অনেক উপকারী। আনারস খাওয়ার
দ্বারা কি উপকার হয় ও ক্ষতি হয়। সে বিষয় নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো।
আমাদের গ্রাম অঞ্চলে অনেকেই বলে আনারস এবং দুধ একসঙ্গে খাওয়া যাবেনা। দুধ আর
আনারস একসঙ্গে মেশালে নাকি বিষ হয়। এটা আমাদের গ্রাম গঞ্জের মানুষের কথা। এ
বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলে তা আমরা জেনে নেই।
ভূমিকা
আনারস একটি বহুবর্ষজীবী ফল। যেটা বেশি বড় না আবার অনেক ছোট না। এটা সাধারণত হয়ে
থাকে ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি থেকে চার ফুট ৯ ইঞ্চি ১১ ইঞ্চি লম্বা। এটি ১৯০ কিংবা ২০০টির
পর্যন্ত ফুল উৎপাদন করে থাকে । এটি একবার ফুল ফোটে এবং ফুলের পৃথক ফল একসঙ্গে
মিলিত হয়ে অনেক ফল তৈরি করে। যখন প্রথম ফল আসে তখন চাষিরা এটাকে সাকার বলে গণ্য
করে। এটি কিছু কিছু বড় জাতের ফলের চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদিত হয় । এবং এর চেয়ে
আর একটু লম্বা ও মোটা আকারের হতে পারে এই গাছের শিকড় অনেক বেশি কিন্তু শিকড়
গুলো ছোট।
এবং পাতাগুলো অনেক মজবুত। যা সহজে এটাকে ছেড়া যায় না, এবং পাতা লম্বা হয় পাতার
দু সাইট দিয়ে কাটা থাকে। এটি দেখতে যেমন ভালো লাগে, খেতেও তেমন সুস্বাদু। এই
ফলটি অনেক আগ থেকে মানুষের মনে পরিচয় দিয়ে লাভ করেছে। মানুষ এটি অনেক ভাবেই
খেয়ে থাকে কেউ শরবত করে খায়, কেউ দোষ বানিয়ে খায়, আর এছাড়াও আনারসে রয়েছে
অনেক পুষ্টি। শরীরের পানির শূন্যতা পূরণে আনারস অনেক ভূমিকা পালন করে। আনারস
খাওয়ার পর পানি খাওয়া যাবেনা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন আনারস বা টক জাতীয় খাবার
খেয়ে দুধ খেলে সেটা পেটে গিয়ে দুধটাকে ভেঙ্গে কঠিন এক ধরনের ছানা তৈরি করে ফলে
সেটা হজম হতে অনেক সময় লাগে এইজন্য আনারসের সঙ্গে দুধ খেতে না বলা হয়েছে। এ
সম্পর্কে নিচে আরও বিস্তারিত বলা হয়েছে।
খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা
আমরা সবাই ফলমূল খেতে অনেক পছন্দ করি। ফল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ফলের
মধ্যে রয়েছে ভিটামিন,মিনারেল, আঁশ, ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যেগুলো শরীরের
কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। এসব উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে সাহায্য করে। এবং ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু আপনি কখন ফল
খাবেন। ফলের মধ্যে অনেক ফল রয়েছে যেকোনো সময় খাওয়া যায় আবার কিছু কিছু ফল আছে
যেকোনো সময় খাওয়া যায় না অনেক নিয়ম-কানুন মেনে খেতে হয়।
রোগ প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া বাড়ানোর জন্য খালি পেটে আনারস খাওয়া জরুরী। আনারসে
যে পটাশিয়াম থাকে সেটা হারকেও শক্ত করে এছাড়াও যদি কেউ কিডনি রোগ থেকে মুক্তি
পেতে চায় তাহলে তার জন্য খালি পেটে আনারস খাওয়া জরুরী।এতে ব্রোমেলিন নামক
এনজাইম থাকে যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। আনারস দেহে রক্ত জমাট বাধা দেয় এর ফলে শিরা
ধমনীর মধ্য দিয়ে সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়।
আনারসে থাকা ম্যাঙ্গোনিজ হারকে শক্ত ও মজবুত করে তোলে। প্রতিনিয়ত আনারস খেলে
কৃমির উৎপাত বন্ধ হবে।ক্যান্সার ও হার্টের রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আনারস খাওয়া
জরুরি আনারসে আছে উচ্চমাত্রায় পানি, ভিটামিন সি, এগুলো দেহকে অনেক সুরক্ষা রাখে।
এছাড়াও আনারস খেলে দাঁতের মাড়ি দাঁত ঠিক থাকে। আর এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম আর
ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য অনেক উপকারী এটা আমরা সবাই জানি। কোন অসুস্থ রোগীর
খাবারের রুচি না হলে তাকে আনারস খাওয়ালে তার রুচি বাড়বে।
আরো পড়ুনঃগাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বেলা খালি পেটে আনারস খেলে কোষকাঠিন্য দূর করার জন্য যথেষ্ট এনজাইম থাকে যা
প্রোর্টিন ও এমাইনো এসিডকে দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে। তবে শর্ত হলো কোন কিছু
খাওয়ার আগেই এটা খেতে হবে। যদি আপনার শরীর অনেক ভালো রাখতে চান তাহলে আনারসের
পানি খান, আনারসের খোসা ফেলে দিয়ে সেটাকে ছোট টুকরো করে নিবেন তারপর একটি গ্লাসে
পানি নিবেন তারপর ওই পানির মধ্যে কয়েক টুকরো আনারস ছেড়ে দিবেন। তারপর খালি পেটে
পানিটা পান করবেন। যদি আপনি প্রতিনিয়ত এভাবে পান করতে পারেন তাহলে অনেক রোগ
জীবাণু থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। হ্যাঁ যদি আপনার শরীরে ডায়াবেটিস বা অন্য কোন
রোগ হয়ে থাকে। তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবার চেষ্টা করবেন।
আনারস খাওয়ার সঠিক সময়
আমাদের মধ্যে আমরা অনেকেই আছি আনারস কখন খাব। এবং কিভাবে খাব, আনারস খাওয়ার সঠিক
সময় কোনটি এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তাই বিভিন্ন সময় আমাদের অনেক ক্ষতির
সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে আসুন আনারস খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি আমরা তা জেনে নেই ।
আমাদের দেশে অনেক ফল রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তার মধ্যে
অন্যতম ফল হচ্ছে আনারস। যা খেতে অনেক সুস্বাদু। এবং শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরী ।
আনারস হচ্ছে একটি সুস্বাদু ফল যা গ্রীষ্মকালে এটি অনেক বেশি পাওয়া যায়। আনারস
ঠিকমতো পরিষ্কার না করে খেলে আপনার এলার্জি সমস্যা হতে পারে। এবং যাদের বুক
জ্বালাপোড়া করে তাদের আনারস খাওয়া একদমই ঠিক না। যদি আমরা সকালে খালি পেটে
আনারস খাই।তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে পাড়ি। বিশেষজ্ঞদের মতে জানা
যায় যে কোন ফলমূল রাতে শোবার আগে খেলে অনেক ভালো হয়, আনারস আপনি দুবেলা খেতে
পারেন রাতে এবং সকালে।
আনারস চাষ কোন অঞ্চলে বেশি হয়
বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল গুলোতে আনারস বেশি বেশি চাষ হয়। যেমন রাঙ্গামাটি,
খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, এছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল,
কুমিল্লা, নরসিংদী,এই জেলাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আনারস চাষ হয়।পুষ্টিমানের দিক
দিয়ে আনারসের গুরুত্ব অনেক। আমাদের বাড়ির আশেপাশে ফাঁকা জায়গা থাকলে আমরাও
আনারস চাষ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারব। আনারস চাষ করে পাহাড়ি
অঞ্চলের কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছে ।
এই আনারস সারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আনারস ক্রয় করে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন
এলাকায়, হাটে বাজারে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে তারা লাভবান হচ্ছে বলে
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তাই আসুন আমাদের বসত বাড়ির আশেপাশে যদি কোন
ফাকা জায়গা পাই তাহলে আমরাও আনারস চাষ করে অনেক স্বাবলম্বী হতে পারব তাই আসুন
পরিবারের অভাব অনটন দূর করতে এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে আমরাও পাহাড়ি অঞ্চলের
কৃষকদের মতো আনারস চাষ করব।
আনারস চাষ পদ্ধতি
আনারস একটি সুস্বাদু ফল। এছাড়াও আনারসে রয়েছে অনেক ভিটামিন। বর্তমান আমাদের
দেশে আমরা কয়েকটি জাতের আনারস চাষ করে থাকি এই ফলের ব্যাপক চাষাবাদ হয় পাহাড়ি
অঞ্চলগুলোতে। এসব জাতের মধ্যে সবচেয়ে মিষ্টি হল হানিকুইন।যা খেতে অত্যন্ত অনেক
ভালো লাগে।কেউ যদি আনারস চাষ করতে চায় তাহলে যতটুকু জৈব সার প্রয়োজন ততটুকু জৈব
সার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও অন্যান্য সার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। এবং
সারগুলো যেন মাটির সাথে মিশে যায় সে ব্যবস্থাও আমাদের নিতে হবে।
তবে আমরা অনেকেই জানি বেলে দোআঁশ মাটিতে আনারস অনেক ভালো হয়। তবে এমন জমি
নির্বাচন করতে হবে যেটার মধ্যে পানি জমে থাকে না। আবার আনারসের সাথে আরো অনেক
কিছু চাষ করা যায় যেমন সয়াবিন, আদা, সরিষা, কালাই, কচু, ফসল হিসেবে এগুলো
আনারসের সাথে চাষ করা যায়। আশ্বিন থেকে অগ্রাহায়ণ পর্যন্ত আনারসের চারা লাগালে
অনেক ভালো হয়, আর এটি অনেক ভালো সময়, প্রতিটি গাছে পচা খবর দিতে হবে ৩১০ গ্রাম,
ইউরিয়া সার দিতে হবে ৩৫ গ্রাম, টিএসপি সার দিতে হবে ১৭ গ্রাম, এমওপি সার দিতে
হবে ৩২ গ্রাম, জিপসাম সার দিতে হবে ১৬ ও ১৭ গ্রাম প্রোয়োগ করলে ভালো হবে ।
চারা রোপনের চার ৪ থেকে ৫ মাস পর ইউরিয়া সার ও পটাশ সার ৫ কিসিতে প্রয়োগ করতে
হবে। এছাড়াও অন্যান্য সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এবং স্যারের আগাছা
পরিষ্কার করা অনেক জরুরী। আগাছা আনারসের জন্য খুবেই ক্ষতিকর। বছরে দুই বার আগাছা
পরিষ্কার করতে হয়, আগস্ট, ও সেপ্টেম্বর মাসে, যখন ফল আসে তখন আবার আগাছা
পরিষ্কার করতে হয় সেটি হল অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে।যখন আমরা আগাছা দিয়ে মালচিং
করি তখন সেটি পচে জৈব সার হিসেবে মাটিতে যুক্ত হয় এবং এতে করে মাটির উর্বরতা
বৃদ্ধি পায়। আর যখন আমরা চারা রোপন করি। তখন থেকে নিয়ে ১৫-১৬ মাস পর জ্যৈষ্ঠ ও
ভদ্র মাসে আমরা এটাকে সংগ্রহ করতে পারি।
টবে আনারস চাষ পদ্ধতি
অনেকেই আনারসের চারা বাড়ির ছাদের উপর টবের মধ্যে চাষ করে। এটি চাইলে আমরাও করতে
পারব, তার কারণ সেগুলোতে বেশি যত্ন নেওয়া লাগে না, কিংবা বেশি কোন সারের
প্রয়োজন হয় না, চাইলে আপনিও এটি আপনার বাড়ির ছাদে টপে করে চাষ করতে পারেন।
আনারসের সাথে দুইটি সাকার থাকে একটি হলো ক্রাউন সাকার, আরেকটি হল স্লিপ সাকার,
এবং এই দুই ছাকারের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো ক্রাউন সাকার যেটা ফলের উপরে থাকে।
যদি আমরা ক্রাউন সাকার দিয়ে চারা বানাতে চাই তাহলে ২ থেকে ৩ দিন প্লেটের উপরে
রাখতে হবে। তারপর সকারের গোড়াটি যখন শুকিয়ে যাবে, তখন পাতাগুলি ২ থেকে ৩ ইঞ্চি
পরিষ্কার করে দিতে হবে। তারপর একটি গ্লাসে পরিষ্কার পানি নিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন
রাখতে হবে। যদি কোন সময় পানি ঘোলাটে হয়ে যায় তাহলে সেটা পরিবর্তন করে দিতে
হবে। এবং ১২ দিন পর যখন শিকড় গুলি ঢেড় থেকে 2 ইঞ্চি কিংবা তার থেকে বেশি বের
হবে। তখন সেই শিকর যুক্ত ক্রাউন সাকার কে ঝুড়িতে কিংবা ড্রামে স্থাপন করতে
পারেন।
যে ক্রাউন শাখার স্থাপন করব সেখানে মাটি দিতে হবে ৫০ ভাগ, জৈব সার দিতে হবে 30
ভাগ, মোটা বালু দিতে হবে ২০ ভাগ, এবং ১০ ভাগ প্রোডাক্ট দিলেও হবে না দিলেও হবে।
সবগুলো মিক্সার করে ঝুড়িতে দিতে হবে । এরপর শিকরযুক্ত যে ক্রাউড শাখারটি আছে।
সেটি ঝুড়ির মাঝ বরাবর স্থাপন করতে হবে। আর একটি ঝুড়িতে একটির বেশি দেওয়া যাবে
না। এখন যখন নির্দিষ্ট সময় হবে তখন পানি কিংবা সার দিতে হবে। এবং এটি সাবলীল না
হওয়া পর্যন্ত ততদিন রোধে রাখা যাবেনা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url